চা

১৮৫৫ সালে বাংলাদেশের সিলেটের টিলাতে প্রথম চা গাছ দেখা যায়। দেশে প্রথম চা বাগান করা হয় মালনীছড়িতে (সিলেট)। নাম ডৌনকান ব্রাদার্স লিঃ।১৮৫৭ সালে বাংলাদেশে চা চাষ শুরম্ন করে ব্রিটিশরা। ব্রিটিশরা প্রথমে বাঙালীদের চা তৈরি করে ফ্রি পান করাত। ১৮৩৯ সালে ‘অসম চা কোম্পানি’ নামে পৃথিবীর প্রথম চা কোম্পানি স্থাপিত হয়।
চা মূলত ক্যামেলিয়া সিনেনসিন উদ্ভিদের পাতা, পর্ব ও মুকুলের কৃষিজাত পণ্য যা বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া “চা” বলতে এক ধরণের সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট পানীয়কেও বোঝানো হয়। চা’র নামকরণ করা হয় গ্রীকদেবী ‘থিয়া’ (Thea) এর নামানুসারে। এর জন্মস্থান চীনদেশে। চা’র বৈজ্ঞানিক নাম Thea Sinensis I Camellia Sinensis। চা Theaceae পরিবারের সদস্য। চা প্রধানত ৩ ধরনের যথা- চীনা চা, আসামী চা ও ইন্দো-চীনা-চা।

১৬৫০ সালে চা প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়। ১৮১৮-১৮৩৪ সালে ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। প্রথম চা ব্যাগ চালু করে আমেরিকা। ২-৩টি কুঁড়ি থেকে চা তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ থেকে ২৫টি দেশে চা রফতানি হয়।
দেশে চা’র চাহিদা বছরে ৮ হাজার টন। দেশের একমাত্র চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান শ্রীমঙ্গলে।

দেশে চা চাষের জমির পরিমাণ ১১৮ হাজার একর। চা উৎপাদনে সরাসরি নিযুক্ত দেশে শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার। দেশে গড়ে বছরে চা উৎপাদন হয় ৪ কোটি ৫০ লাখ কেজি। বিশ্বে চা রফতানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান অষ্টম। চা বাগান সিলেটে ২০টি, মৌলভীবাজারে ৯১টি-হবিগঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রামে ২২টি, রাঙ্গামাটিতে ১টি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১টি।

প্রধান চা উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, রাশিয়া ও বাংলাদেশ।

দেশে ১৫৮টি চা বাগান আছে। দেশের মোট চা উৎপাদনের ৯৩% সিলেটে, ০•১৩% পাবর্ত্য চট্টগ্রামে, ৬•৫৩% চট্টগ্রামে এবং ০•১২% কুমিলস্নায় চাষ হয়। দেশে উদ্‌ভাবিত ৩টি জাত হলো- বিটি ১, বিটি ২ ও বিটি ৩। ক্লোনিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা হয়।

লেবু চা’র উৎপত্তি রাশিয়ায়। এর আরেক নাম রাশিয়ান চা। সবচেয়ে বেশি চা পান করে আয়ারল্যান্ডের মানুষ। সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা হলো ‘পিকো’।

প্রতিদিন সারা বিশ্বে গড়ে দুই বিলিয়ন কাপ চা পান করা হয়। সারা বিশ্বে শুধু চা পাতা ও ফুল থেকে তিন হাজার রকমের চা হয়। পুরম্নষের চেয়ে মেয়েদের চা পানের নেশা বেশি। চা তিনভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়- কালো চা, সবুজ চা ও উনং চা। এক বাগান থেকে বছরে ৩০-৩৫ বার চা পাতা তোলা হয়। একজন শ্রমিক দিনে ১৫-৪০ কেজি চা পাতা তুলতে পারে। এক কেজি চা পাতা থেকে ৪৫০-৫০০ কাপ চা তৈরি হয়।

সবুজ চা হৃদরোগীদের জন্য উপকারী। হাঁপানি রোগীদের জন্য চা পান উপকারী।

চা-এর রকমফের

হার্বাল চা
গরম জলে হার্ব মিশিয়ে এ চা হয়। যেমন ধরুন সবুজ চা। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে ফ্যাট কমায়। দাঁতের ক্যাভিটি রক্ষা করে, ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়। তবে সব হার্ব বা ভেষজ উপাদান সবাইকে সুট নাও করতে পারে, যেমন গর্ভবতী মহিলা বা বয়স্কদের।

চাইনিজ চা

চীনে যে পদ্ধতিতে চা পাতা পান করার জন্য তৈরি করা হয় সেটাই চাইনিজ টি। অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং জীবাণু ধ্বংস করে। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে, ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ব্ল্যাক টি_ এই চা-এর ফ্লেভার বেশি স্ট্রং এবং ক্যাফিন-এর মাত্রা অন্য চায়ের তুলনায় বেশি। চীনে ব্ল্যাক টি-কে রেড টিও বলে। এর মধ্যে ফ্লেভনোয়েড-এর মাত্রা বেশি। কোলেস্টেরল কমায়, রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে, ইনফ্লামেশন কমায়, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
চা গাছে ফুল::মোকারম হোসেন


গ্রিন টি

হাতে চা পাতা তুলে, শুকিয়ে বেক করে এই চা পাতা তৈরি করা হয়। এবং যে পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় তাতে এর গুণাগুণ অনেকটাই অক্ষত থাকে। ক্যান্সার, রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, হাইকোলেস্টেরল, কার্ডোভাসকিউলার ডিজিজ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণে থাকে, যদি ছোট থেকে নিয়মিত পান করা যায়।

-দীপক দেবনাথ, কলকাতা

চা চা Reviewed by রেজওয়ান on 12:12 AM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.