শাপলা

শাপলা ফুলের ইংরেজি নাম Water lily। আর বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea nouchali।প্রাচীনকালে গ্রীকরা এই ফুল জলপরী দেবীকে উৎসর্গ করতো। এই দেবীর নাম ছিলো Nymph। সেখান থেকেই শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea হয়েছে। তবে nouchali শব্দটির আগমন কোথা থেকে তা জানা যায়নি। অনেকের ধারণা এই শব্দটি বাংলাদেশের নোয়াখালি শব্দ থেকে আসতে পারে।
খ্রীষ্টপূর্ব ২৫০০ বছর আগের মিশরের এক ধ্বংসাবশেষে শাপলা ফুলের মতো একটি আঁকা ছবি পাওয়া গেছে। প্রাচীন যুগে মিশরে শাপলা ফুল চাষ হতো।


শাপলা সমস্ত বাংলাদেশীর কাছেই এটা সুপরিচিত কারন এটা আমাদের জাতীয় ফুল। এটি এক প্রকারের জলজ উদ্ভিদের ফুল। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে নদী, খাল, বিল, হাওড়, পুকুর ছড়িয়ে আছে। তার মাঝে ছোট ছোট বাচ্চারা দল বেঁধে সাতাঁর কাটে, গোসল করে, মাছ ধরে আরও কত কী যে করে! সে এক অপূর্ব দৃশ্য। শুধু কি তাই, গ্রামের শিশু-কিশোরদের পানিতে নেমে শাপলা তোলার দৃশ্য গ্রামে গেলেই চোখে পড়ে। নদী বাদ দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সব জলাশয়েই শাপলা ফুল ফুটতে দেখা যায়। আর এ কারণেই সুন্দর সাদা এই ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে।


বদ্ধ জলের উপর ভেসে থাকে শাপলা ফুল আর তার বড় সবুজ পাতা। তবে বাংলাদেশে মাত্র কয়েক প্রজাতির শাপলা ফুল দেখা গেলেও সারা বিশ্বে ৩৫ প্রজাতির শাপলা ফুল দেখা যায়। আমাদের দেশে সাধারণত দুই রঙের শাপলা ফুল পাওয়া যায়। বেশির ভাগই সাদা আর কতগুলি গোলাপী রঙের। তবে যে কোন শাপলা ফুলই কিন্তু জাতীয় ফুল নয়। শুধুমাত্র সাদা শাপলা ফুলই বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এর মাঝখানে গর্ভকেশরগুলো হলুদ রঙের হয়।


আমাদের জাতীয় ফুল সাদা শাপলা
উদ্ভিদটির পাতা এবং ফুলের কিছু অংশ পানির উপরে থাকে আর বাকী অংশ থাকে পানির নীচে। পানির গভীরতা অনুযায়ী এর দৈর্ঘ্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। স্বাদু পানিতে জন্মানো এই ফুলের বৃন্ত লম্বা হয়ে থাকে। আর এর যে সবুজ পাতাগুলো থাকে সেগুলো বেশ শক্ত আর বড়। পাতাগুলো দেখতে যেন একেকটা সুন্দর থালা। থালার মত চারিধার এর উঁচু। প্রতিটি ফুলে সাধারণত ছয়টি করে পাপড়ি আর ছয়টি করে পুংকেশর থাকে। তবে কিছু ফুলের অনেকগুলো করেও পাপড়ি আর পুংকেশর দেখা যায়। পাতা আর ফুল সবই মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে আর মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে। কোন শাপলা গাছের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সেটা থেকে আবার নতুন করে বংশ বিস্তার শুরু করে। শাপলা বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে।






বিল ভর্তি লাল শাপলার ছবিটা গোপালগঞ্জের একটি বিল থেকে তুলেছেন বিবেকানন্দ বিশ্বাস।

উদ্ভিদটির গোড়ায় থাকে আলুর মত এক ধরনের কন্দ যার নাম শালুক, অনেকে এটি সব্জি হিসেবে খেয়ে থাকে। তাছাড়া শাপলার ফুল যেটিকে গ্রামে নাইল বলে থাকে এটিও অনেকের প্রিয় সব্জি, এখন বর্ষা মৌসুমে বাজারে এটি কিনতে পাওয়া যায়। শাপলার পুস্পদন্ডও আমাদের দেশ সবজী হিসেবেও খাওয়া হয়। বুক জলে নেমে বাচ্চা বুড়ো সবাই এই ফুল সংগ্রহ করে। পুকুর পাড়ে সারি সারি ফুটে থাকা শাপলা ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয় বাজারে। এর বীজও আবার ভেজে খেতে দারুন মজা।

ছবিতে দেখুন নসিমনে কি পরিমান বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবিটা ফরিদপুর থেকে তোলা।


শাপলা ফূল ফুটে ঝরে যাওয়ার পর যে ফল থাকে তার মধ্য বীজ তৈরী হয়। বীজগুলো সরষে দানার মত কালো কালো। এটি সংগ্রহ করে শুকিয়ে অনেকে খই ভেজে খায়। ছেলে বেলায় অনেক মজা করতাম এই খৈ খেতে গিয়ে কারণ এটি আকৃতিতে ছোট বলে খেতে হয় নিঃশ্বাস বন্ধ করে, কোনক্রমে নিঃশ্বাস ছাড়লে হাত থেকে খৈ উড়ে যায়।

বাংলাদেশের কয়েন, টাকা, দলিলপত্র ইত্যাদিতে জাতীয় ফুলের ছবি বা জলছাপ থাকে।
বাংলা নাম: শালুক
অন্যান্য ভাষায় এর নাম: White Water Lily, White Lotus, Tharo angouba (Manipuri), வெள்ளாம்பல் VeLLAmbal (Tamil), कुमुद Kumuda (Sanskrit), Shaluk (Bengali), Neerambal (Malayalam), Kannaidile (Kannada), Nal (Assamese)
বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaea lotus var. pubescens/pubescens/esculenta
গোত্র: Nymphaeaceae
শাপলা শাপলা Reviewed by রেজওয়ান on 3:15 AM Rating: 5

1 comment:

  1. Great post! I am actually getting ready to across this information, is very helpful my friend. . ফুলের ছবি ডাউনলোড করুন ২০২২ সালের সেরা ....

    ReplyDelete

Powered by Blogger.