মধুগন্ধি স্বর্ণচাঁপা

স্বর্ণচাঁপার প্রতি আমাদের কিঞ্চিৎ পক্ষপাত আছে। কারণ চাঁপাফুল বলে কথা। সেই প্রাচীনকাল থেকেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে তার অবস্থান। মৈমনসিংহ গীতিকায় আছে_ 'চাইর কোনা পুস্কুনির পারে চাম্পা নাগেশ্বর/ ডাল ভাঙ্গ পুষ্প তুল কে তুমি নাগর।' চাঁপাফুলকে আঞ্চলিক ভাষায় চাম্পা ফুল বলা হয়। প্রাচীন লোককথায়ও চাম্পা নামটিই এসেছে বারবার।
জানামতে, ঢাকার শাহবাগে গণগ্রন্থাগারের প্রবেশপথের বাঁপাশে কয়েকটি সুউচ্চ গাছ চোখে পড়ে। জাতীয় জাদুঘরের ভাস্কর নভেরা হল লাগোয়া পুকুরপাড়ে আছে বেশ কয়েকটি। এ ছাড়া নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি, হলিক্রস স্কুল, সড়ক ভবন, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, শিশু একাডেমী এবং সিলেট ও চট্টগ্রামের পথপাশে দেখা যায়।
চাঁপাফুল নামটি আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। তবে সব চাঁপাই চাঁপা নয়। প্রসঙ্গত কনকচাঁপার কথা বলা যেতে পারে। নাম চাঁপা হলেও আদতে চাঁপা পরিবারের সদস্য নয়। একটির সঙ্গে অন্যটির দুস্তর ফারাক। আলোচ্য চাঁপা সুষমা ও সুগন্ধের জন্য কাব্য, কলা, উপহার, অর্চনা সর্বত্রই ব্যবহৃত। এর সি্নগ্ধ বর্ণ ও উজ্জ্বল সৌরভ পবিত্রতার প্রতীক। বৃদ্ধি দ্রুত, জীবন দীর্ঘ, চাষ সহজ এবং প্রস্টম্ফুটন অফুরান। হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছে গাছ অত্যন্ত পবিত্র।
স্বর্ণচাঁপা মূলত পাহাড়ি প্রজাতির গাছ। সমতলেও বৃদ্ধি স্বাভাবিক। বৈজ্ঞানিক নাম_ Michelia champaca. গাছের কাণ্ড সরল, উন্নত, মসৃণ এবং ধূসর। পাতা চ্যাপ্টা, উজ্জ্বল-সবুজ, একান্তরে ঘনবব্ধ। ফুল একক, কাক্ষিক এবং ম্লান-হলুদ, রক্তিম কিংবা প্রায় সাদা। পাপড়ি সংখ্যা প্রায় ১৫। ফুলের বর্ণগত বিচিত্রতায় বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। মাটি, আবহাওয়া, পারিপার্শিক অবস্থা এমনকি তাজা ও বাসি ফুলের ক্ষেত্রেও রঙের তারতম্য হতে পারে। পরিপূর্ণ প্রস্ফুটিত চাঁপা তীব্র সুগন্ধি। গ্রীষ্মের প্রথম ভাগ থেকে বর্ষা-শরৎ অবধি ফুল থাকে। ফুল শেষ হলে গুচ্ছবদ্ধ ফল ধরে। দেখতে অনেকটা আঙুরের মতো। কাক ও শালিকের প্রিয় খাদ্য। চাঁপা ভেষজগুণেও অনন্য। বাকল ও ফুল বাত রোগের ওষুধ। ফুলের আরক চক্ষুরোগে ব্যবহার্য। বীজ পায়ের ক্ষতে উপকারী। এর কাঠ মূল্যযুক্ত।

মোকারম হোসেন
মধুগন্ধি স্বর্ণচাঁপা মধুগন্ধি  স্বর্ণচাঁপা Reviewed by রেজওয়ান on 9:01 AM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.