সী-উইড (Seaweeds) সাগরের এক প্রকার তলদেশীয় জলজ উদ্ভিদ (Macro-algae)। সী-উইড বিশ্বব্যাপী একটি গুরত্বপূর্ণ জলজ সম্পদ, পুষ্টিগুণের বিচারে যা বিভিন্ন দেশে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে ১১৭ টি সী-উইড প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে এর মধ্যে ১০ প্রজাতির সী-উইড বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরের ৭১০ কিমি.উপকূল ও ২০০ নটিক্যাল মাইল বিস্তৃত ১১৮,৮১৩ বর্গ কিমি. জলায়তন-যা আমাদের দেশের মূল ভুখন্ডের আয়তনের চেয়েও বেশী। এই জলসীমায় আহরণযোগ্য প্রচুর মৎস্য প্রজাতি ছাড়াও রয়েছে অনাহরিত বিপুল জলজসম্পদ। এই বিপুল আয়তনের জলজসম্পদের একটি ক্ষুদ্র অংশ বর্তমানে আমরা আহরণ করতে পারছি। সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়ার পাশাপাশি এই সী-উইড চাষ ও রপ্তানি বাংলাদেশের ব্লু-ইকোনমির উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য রাখতে পারে। পাশাপাশি বিশাল সমুদ্রের উপকূলে মানুষের জন্যে বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে সী-উইড চাষ।বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারিদ্র বিমোচনের জন্য পদক্ষেপসমুহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। তাছাড়া, বর্তমান সরকার প্রচলিত মৎস্য চাষের পাশাপাশি বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন অপ্রচলিত জলজসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও উন্নয়নে সবিশেষ গুরুত্বারোপ করছে।
সামুদ্রিক শৈবাল বা সী-উইড আমাদের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় সামুদ্রিক জলজসম্পদ। উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের জলজসম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার ও উন্নয়নকল্পে সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে ১৬৮৬.০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জানুয়ারী, ২০১৮ হতে ডিসেম্বর, ২০২১ আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
এক সময় আমাদের দেশের
সেন্টমাটিন, টেকনাফ, কক্সবাজার ইত্যাদি উপকূলীয় এলাকার মানুষ জঞ্জাল
মনে করে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের
এমনি-এমনি বা নামমাত্র
মূল্যে দিয়ে দিত।
বলার অপেক্ষা রাখে না সিউইড
পণ্য মিয়ানমারের অন্যতম একটি রফতানি
পণ্য। অথচ
বাংলাদেশের জলসীমার সিউইড মানের দিক দিয়ে
বিশ্বের এক নম্বর।
বাংলাদেশে সিউইডের একমাত্র উদ্যোক্তা জাহানারা ইসলাম এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন শখের বশেই। এর গুণপনায় মজে গিয়ে তিনি এখন নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করেন- ‘এই সিউইড পণ্য দিয়েই আমি বাংলাদেশের সাগরজয়কে সার্থক করে তুলব।’ প্রসাধন, খা দ্য ও ডেকোরেশন- তিনভাবেই তিনি এ পণ্য বাজারজাত করছেন। তিনি সমুদ্রের অন্ধকার অতলে ডুব দিয়ে দেশের জন্য খুলে দিয়েছেন রত্নভাণ্ডারের দ্বার। একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনার জন্য সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা খুঁজতে গিয়ে কক্সবাজারে সন্ধান পেয়েছিলাম মিসেস জাহানারা ইসলাম এর। কথা প্রসঙ্গে জানালেন-যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী তাঁর আত্মীস্বজন এবং পরিচিতজনদের ভেতর ক্যান্সার আক্রান্তদের ডাক্তার সিউইড খাওয়ার পরামর্শ দিলে তারা বাংলাদেশে এসে তাঁর কাছ থেকে এগুলো সংগ্রহ করতেন। তাঁরাই ছিলেন তাঁর প্রথম দিকের ক্রেতা। এখন অবশ্য বেশ কয়েকটি পাঁচ-তারা হোটেলেও সরবরাহ করছেন। জানালেন, ‘এখন আমরা খাদ্য, প্রসাধনী, ডেকোরেশন, ওষুধ, পশুখা দ্য, জৈব সার (কৃষিতে ব্যবহার্য) ও জ্বালানি হিসেবে সিউইড বাজারজাত করছি। খাদ্যের ভেতরে আমাদের উদ্ভাবিত ডায়াবেটিস ডায়েটটি খুব সমাদ্রিত হয়েছে এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি ছাড়াও পিৎজা, সমুসা, পাকোড়া, স্যুপ, সালাদ , ডেজার্ট , কেক, বান, সিঙ্গাড়া, শাক ইত্যাদিতে সিউইড ব্যবহৃত হচ্ছে।’
সামুদ্রিক খাবারের প্রতি সাধারণ মানুষের নাক সিটকানির একটা প্রবণতা আছে এদেশের মানুষের। প্রচার নেই বলে দেশের কেউ জানেই না কী সম্পদ তারা হাতছাড়া করছে স্রেফ অজ্ঞতার কারণে! বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম এর মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে চলেছেন। সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা কি এগিয়ে আসবেন এই গুপ্তধন আহরণে? মূলত Blue Sea Economy বা নীল সমুদ্র অর্থনীতি’র অন্যতম সম্পদ হতে পারে আলোচ্য সিউইট তথা সমুদ্র শৈবাল।
No comments: