কাজুবাদাম

কাজুবাদাম খুবই সুস্বাদু। দারুণ স্বাদের এ বাদামের চাষ হয় দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও। বৃক্ষ জাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজুবাদামের স্থান তৃতীয়। এ বাদামের দুটি প্রজাতি রয়েছে। এর ফলের রঙ ও আকারের ওপর ভিত্তি করে লাল, হলুদ, গোলাপি, গোলাকার ইত্যাদি জাতের উদ্ভাবন হয়েছে।
কাজুবাদামের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিল। বর্তমানে প্রধানত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, মাদাগাস্কার প্রভৃতি দেশে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে।

খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টার খেজুরবাগান, সেনানিবাস, হর্টিকালচার সেন্টার নারানখাইয়া, পানখাইয়া পাড়া, কমলছড়ি ও জামতলী এলাকায় কাজুবাদামের গাছ চোখে পড়ে। এ ছাড়া, রামগড় উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারেও রয়েছে কাজুবাদামের বাগান।

রামগড় উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারে সাতটি কাজুবাদামের গাছ আছে। গাছগুলোর বয়স আট থেকে ১৪ বছর। এ মৌসুমে একটি গাছে ১২ কেজি করে বাদাম পাওয়া গেছে।

কাজুবাদামের বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale। Anacardiaceae পরিবারের সদস্য এটি। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি আকারে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে কাজুবাদাম চাষের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে খাগড়াছড়ির কৃষিপণ্যের মধ্যে কাজুবাদামও একটি বিশেষ স্থান করে নিতে পারে।

কাজুবাদাম একটি উষ্ণমণ্ডলীয় ফল। এটি সূর্যালোকপ্রিয় গাছ। বেশি ছায়া সহ্য করতে পারে না। ভারী বেলে দোআঁশ মাটি এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী। গাছের ফল মার্চ-এপ্রিল মাসে সংগ্রহ করতে হয়।

রোপণ : জমি তৈরি করে ৭-৮ মিটার দূরে ১ সেন্টিমিটার আকারের গর্তে চারা লাগাতে হবে। প্রতি গর্তে ২-৩টি বীজ বপন করতে হবে। প্রতি গর্তে ১০ কেজি গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমপি সার লাগানোর এক সপ্তাহ আগে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্ত প্রস্তুত করতে হয়। এরপর চারা বা বীজ লাগানো উচিত। পরের বছর প্রতি গাছে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ২০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বাড়াতে হবে।

পরিচর্যা : চারা লাগানোর প্রথম কয়েক বছর অপ্রয়োজনীয় যে ডালপালা থাকে তা ছাঁটাই করে কাঠামো গঠন করা উচিত। মরা ও ভাঙা ডাল মাঝে মধ্যে পরিষ্কার করতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগবালাই : কাজুবাদাম গাছের ডালের আগা এক ধরনের রোগের আক্রমণে শুকিয়ে যায়। ডাইথেন এস-৪৫ টিন্ট ইত্যাদি ছত্রাকনাশক গাছে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া লিফমাইনার নামক পোকা গাছের কচি পাতা চেঁচে খায়। এ পোকা দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন গ্রুপের ওষুধ মাত্রা অনুযায়ী পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।

ফলন : ফল পাকা শুরু হওয়ার সময় হতে প্রায় দেড় থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত পাকা ফল পাওয়া যায়। যখন বাদামের খোসা ধূসর কালো রঙ ধারণ করে এবং খুব শক্ত হয় তখন বুঝতে হবে বাদাম পেকেছে। গাছপ্রতি বছরে ৫০-৭৫ কেজি বাদাম পাওয়া যায়।
কাজু বাদাম
কাজুবাদাম সাধারণত ভেজে খাওয়া হয়। পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত কাজুবাদামকে দা দিয়ে কেটে খুঁচিয়ে শাঁস বের করা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে বীজের আবরণ তুলে ফেলা হয়। লবণ-পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ভাজা হয়। এতে লবণাক্ত স্বাদের কাজুবাদাম পাওয়া যায়। আর মিষ্টি স্বাদের কাজুবাদামের জন্য বাদাম ভাজার পর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নেওয়া হয়।

বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর জন্যও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে ৩০.১৯ গ্রাম শর্করা, ১৮.২২ গ্রাম আমিষ, ৪৩.৮৫ গ্রাম চর্বি থাকে। কাজুবাদামে বিভিন্ন ভিটামিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক খনিজ উপাদান রয়েছে।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানান, পূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা অর্ধডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতো। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাজুবাদামের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।

কাজুবাদামের গাছে যে ফল ধরে তাকে কাজু আপেল বলে। কাজু আপেলও সুমিষ্ট ও সুগন্ধযুক্ত। কাজু আপেলের একটি মাত্র বীজ থাকে, যা কাজুবাদাম নামে পরিচিত। ফল পাকলে গাছ থেকে এমনিতেই ঝরে পড়ে গাছের নিচে।
সূর্যালোকপ্রিয় কাজুবাদামের গাছ বেশি ছায়া সহ্য করতে পারে না। ভারী বেলে দো-আঁশ মাটি এ গাছের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

নীরব চৌধুরী| আহমেদ তোফায়েল
কাজুবাদাম কাজুবাদাম Reviewed by রেজওয়ান on 5:20 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.