ধাইরা ফুল

শুধু পার্ক কিংবা উদ্যানেই নয়, পরজীবী এ গাছ প্রায় সারা দেশেই সহজলভ্য। তবে পুরোনো গাছের সুউচ্চ ডাল এদের প্রিয় আবাস হওয়ায় একটু ভালোভাবে খুঁজলেই কেবল দেখা মিলবে। মূল গাছের দিকে তাকালে মনে হবে একগুচ্ছ জীবন্ত লতাপাতা যেন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে!


এরা পরজীবী গাছ। সাধারণত ধাইরা (Dendrophthoe falcata) নামেই বেশি পরিচিত। কোথাও কোথাও মান্দা বা বান্ধা নামেও ডাকা হয়। অনেক এলাকায় পরগাছাও বলে। প্রিয় আবাস পরিণত আমগাছ। কখনো কখনো মেঘশিরীষ, মেহগনি, রাবার বট বা কাঁঠালগাছেও দেখা যায়। বাংলার বনফুল গ্রন্থে নওয়াজেশ আহমদ জানিয়েছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমবাগানগুলোতে এ গাছ বেশি দেখা যায়। নেপালের হিমালয় অঞ্চলে আরেকটি প্রজাতি বেশ সহজলভ্য।

প্রকৃতিতে শীতের আবহ শুরু হলেই এদের উজ্জ্বল রঙের ফুল ফুটতে শুরু করে। বছরের বাদবাকি সময় আমাদের চোখেই পড়ে না। কাষ্ঠল লতা। গুচ্ছমূল আশ্রয় আঁকড়ে থাকে। পাতা পুরু ও বিপ্রতীপভাবে বিন্যস্ত। প্রস্ফুটনকাল ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল। ফুল গুচ্ছবদ্ধ, পুষ্পনল উজ্জ্বল লাল, ওপরে মুখের কাছে সবুজ, চারটি দীর্ঘ আয়তাকার লতিযুক্ত, আড়াই থেকে সাড়ে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা, বৃতি খাটো, পরিপূর্ণভাবে বিকশিত পাপড়ি চুলের মতো সরু ও মরিচা রঙের।

সহজলভ্য আরেকটি ভ্যারাইটির পুষ্পনল সাদাটে। বংশবৃদ্ধি পাখির মাধ্যমে। পাখিরা ফল খেয়ে যেসব গাছে ঠোঁট ছোঁয়ায়, সেখানেই বীজ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে এই গাছের আগ্রাসন মূল গাছকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এদের বাকল ও পাতা বিভিন্ন রোগের মহৌষধ।

পৃথিবীতে এই গণে প্রায় ৩১ প্রজাতির গাছ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও এশিয়ায়। ভারতবর্ষে পাওয়া যায় সাত প্রজাতির গাছ। বটের কয়েকটি প্রজাতির সঙ্গে এদের মৌলিক সাদৃশ্য আছে। প্রায় ৭০ বছর আগে ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ধাইরার গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করেছে। অন্য গাছপালার সঙ্গে এদের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে, এরা জন্ম ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাধারণত আরেকটি গাছের ওপর নির্ভর করে।

সূত্রঃ প্রথম আলো
লেখকঃ মোকারম হোসেন
ধাইরা ফুল ধাইরা ফুল Reviewed by রেজওয়ান on 11:47 AM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.