অর্জুন

  দেশজ গাছগুলোর মধ্যে অর্জুনের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। কমব্রিটেসি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এ গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia arjuna , সংস্কৃত নাম ককুভ। বিরাটাকৃতির পত্রমোচী বৃক্ষ। কা- মসৃণ, মৃদু বাদামি কিংবা সবুজাভ ধূসর। পাতা সরল, ৩-৬ ইঞ্চি লম্বা, ডিম্বাকৃতি, চামড়ার মতো, প্রায় স্থূলকোণী, মসৃণ এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ। পুষ্পমঞ্জরী উৎক্ষিপ্ত, বহু পৌষ্পিক, প্রান্তিক, খাটো এবং অনিয়ত। ফুল অতি ক্ষুদ্র, অনাকর্ষী, মৃদু হলুদ রঙের, খাটো এবং ঘনবদ্ধ। বৃত্যংশ ৫টি, প্রায় মসৃণ। ফল ডিম্বাকৃতি, কাঠের মতো কঠিন, শুষ্ক এবং ৫টি শিরবিশিষ্ট। শীতের শেষেই সাধারণত গাছ নিষ্পত্র হয়ে যায় এবং বসন্তে নতুন পাতায় গাছ ভরে যায়। নতুন পাতা গজানোর সময়েই গাছের শাখাগুলো পুষ্পমঞ্জরিতে ভরে ওঠে।
অর্জুন উপকারী ভেষজ। যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ হাই ব্লাডপ্রেসার নেই, তাদের জন্য অর্জুন বাকল কাঁচা
হলে ১০-১২ গ্রাম আর শুকনো হলে ৫-৬ গ্রাম একটু থেঁতো করে, ১২৫ মিলিলিটার দুধ আর আধালিটার পানি একসঙ্গে সিদ্ধ করে, আন্দাজ ১২৫ মিলিলিটার থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে বিকালের দিকে খেতে হবে। তবে গরম অবস্থায় সিদ্ধ দুধটা ছেঁকে রাখা ভালো। এর দ্বারা বুক ধড়ফড়ানি অবশ্যই কমবে। তবে পেটে বায়ু না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। অর্জুনের বাকল এ পদ্ধতিতে সেবন করলে লো ব্লাডপ্রেসারও স্বাভাবিক হবে। প্রাচীন বৈদ্যরা বাকলের গুঁড়ো, বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে সেটা কমপক্ষে ৭ বার শুকিয়ে রেখে দিতেন। দমকা কাশির রোগীকে এর সঙ্গে একটু ঘি ও মধু বা মিছরির গুঁড়ো মিশিয়ে চাটতে দিতেন। ৪-৫ গ্রাম অর্জুন বাকলের ক্কাথে ছাগলের দুধ মিশিয়ে সেবন করালে রক্ত আমাশয় উপশম হয়। জেনে রাখা ভালো যে অর্জুন গাছের সব অংশই কষায় রস(
Astringent), এজন্য অর্জুন ক্কাথে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। তবে দুধে সিদ্ধ অর্জুন বাকলের ব্যবহারে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। শরীরের কোথাও মচকে গেলে কিংবা হাড়ে চিড় খেলে অর্জুন বাকল ও রসুন বেটে অল্প গরম করে ওখানে লাগিয়ে বেঁধে রাখলে ওটা সেরে যায়। তবে সেই সঙ্গে অর্জুন বাকলের চূর্ণ ২-৩ গ্রাম মাত্রায় আধাচামচ ঘি ও সিকি কাপ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরো ভালো হয়। অর্জুন ফলের শুকনো টুকরো কলকে করে তামাকের মতো ধোঁয়া টানলে হাঁপানির টান কমে যায়। অর্জুনের বাকল মিহি করে গুঁড়ো করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মুখের মেচতায় লাগালে মেচতার দাগগুলো চলে যায়। শরীরের কোথাও ফোড়া হলে অর্জুনের পাতা দিয়ে ঢাকা দিলে ফোড়া ফেটে যায়, তারপর তাতে পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। এত উপকারী একটি গাছ অর্জুন অথচ আমরা কত নিষ্ঠুর ! বাকল সংগ্রহের জন্য অর্জুনের কচি চারাগাছগুলোকেও রেহাই দেই না আমরা। পার্ক, বাগান কিংবা রাস্তার ধারের অর্জুন গাছ সব জায়গার একই চিত্র। 

অর্জুন অর্জুন Reviewed by রেজওয়ান on 1:04 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.