গম

বাংলাদেশে খাদ্য ফসল হিসেবে গম দ্বিতীয় শীর্ষস্হানে রয়েছে। গমের চাষ সহজ, সেচ কম দিলেও চলে এবং রোগ ও পোকার আক্রমণের তেমন সমস্যা নেই বলে বাংলাদেশে গম চাষ এতো বেশী জনপ্রিয় হয়েছে। গমের ইংরেজী নাম Wheat এবং বৈজ্ঞানিক নাম Triticum aestivum.
যে সব জায়গায় বেশী পরিমাণে গম চাষ হয়
বাংলাদেশের সব জায়গায় গম চাষ হয়, তবে উল্লেখযোগ্য জেলাগুলো হলো দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, যশোর, জামালপুর, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, ভোলা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা।
















ভাল ফলনের জন্য নতুন উদ্ভাবিত জাত নির্বাচন করা উচিত। উপযুক্ত সময়ে বপনের ক্ষেত্রে নীচে উল্লেখিত জাতগুলো ভাল -
বিজয়
প্রদীপ
শতাব্দী
সুফী
সৌরভ।
দেরীতে বপনের জন্য সুফী ও সৌরভ জাতদু’টি ভাল। অতি সম্প্রতি যে জাতগুলি (প্রদীপ, বিজয় ও সুফী) বাজারে এসেছে সেগুলো বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী ও তাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।
ভাল জাতের বশিষ্ট্যঃ
উচ্চ ফলনশীল;
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন;
অধিক তাপ সহ্য করতে পারে;
শীষের সংখ্যা বেশি;
প্রতি শীষে পুষ্ট দানার সংখ্যা বেশি।
নীচে ভাল জাতের গমের বর্ণনা দেওয়া হলো:
১. শতাব্দী (বারি গম ২১)
গম গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শতাব্দী (বারি গম ২১) নামের একটি উচ্চ ফলনশীল গমের জাত আবিষ্কার করে। এ জাতটি ২০০০ সালে বাজারে আসে। আমন ধান কাটার পর দেরিতে বপনের জন্যও জাতটি উপযোগী। এটি বাংলাদেশের সকল অঞ্চলে চাষাবাদ করা যায়।
বৈশিষ্ট্য
১. গাছের উচ্চতা ৩ থেকে ৩.২৮ ফুট।
২. কুশির সংখ্যা ৫ থেকে ৬টি।
৩. পাতার রং হালকা সবুজ।
৪. শীষ বের হতে ৬৫ থেকে ৬৮ দিন লাগে।
৫. প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪০ থেকে ৪৫টি।
৬. দানার রং সাদা ও আকারে বড়।
৭. হাজার দানার ওজন ৪৬ থেকে ৪৮ গ্রাম।
৮. ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৫ থেকে ১১২ দিন সময় লাগে।
৯. জাতটি "পাতার দাগ রোগ" সহনশীল এবং "মরিচা রোগ" প্রতিরোধী।
১০. উপযুক্ত পরিবেশে একরপ্রতি ফলন ১৪৫০ থেকে ২০০০ কেজি।
১১. অধিক তাপ সহ্য করতে পারে।


২. সৌরভ (বারি গম ১৯)
সৌরভ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। জাতটি ১৯৯৮ সালে অনুমোদন পায়। দেশের সকল অঞ্চলে এ জাতটি উপযুক্ত সময় ও দেরিতে বপনের ক্ষেত্রে উপযোগী।
বৈশিষ্ট্য
১. গাছের উচ্চতা ৩ থেকে ৩.২৮ ফুট।
২. কুশির সংখ্যা ৫ থেকে ৬টি।
৩. পাতা চওড়া, হেলানো এবং গাঢ় সবুজ।
৪. কাণ্ড শক্ত এবং ঝড় বৃষ্টিতে সহজে হেলে পড়ে না।
৫. প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪২ থেকে ৪৮টি।
৬. দানার রং সাদা এবং আকারে মাঝারি থেকে বড়।
৭. হাজার দানার ওজন ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম।
৮. শীষ বের হতে ৬০ থেকে ৬৭ দিন সময় লাগে।
৯. জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী।
১০. বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০২ থেকে ১১০ দিন সময় লাগে।
১১. উপযুক্ত পরিবেশে একরপ্রতি ফলন ১৪০০ থেকে ১৮৫০ কেজি।
১২. অধিক তাপ সহ্য করতে পারে।


৩. বারি গম-২২ (সুফী)
'রি গম-২২' (সুফী) জাতটি বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে ও মাঠ পর্যায়ে ফলন পরীক্ষায় ভাল বলে প্রমাণিত হয়। এ জাতটি ২০০৫ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক 'বারি গম-২২' (সুফী) নামে অনুমোদন লাভ করে। এ জাতটি উপযুক্ত সময় ও দেরিতে বপনের ক্ষেত্রে উপযোগী।
বৈশিষ্ট্য
১. চার পাঁচটি কুশি বিশিষ্ট গাছের উচ্চতা ৩ থেকে ৩.৩৫ ফুট।
২. পাতা চওড়া ও গাঢ় সবুজ।
৩. শীষ বের হতে ৫৮ থেকে ৬২ দিন সময় লাগে।
৪. বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০০ থেকে ১১০ দিন সময় লাগে।
৫. শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৫০ থেকে ৫৫টি।
৬. দানার রং সাদা, চকচকে এবং আকারে ছোট।
৭. জাতটি "পাতার দাগ রোগ" সহনশীল এবং "মরিচা রোগ" প্রতিরোধী।
৮. উপযুক্ত পরিবেশে একরপ্রতি ফলন ১৪৫০ থেকে ১৯৫০ কেজি।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: 'বারি গম-২২' (সুফী) জাতটি অধিক তাপ সহ্য করতে পারে ও চিটা প্রতিরোধী। এজাত থেকে উৎপন্ন আটায় শক্তিশালী গ্লুটেন নামক উপাদান ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান থাকায় জাতটি পাউরুটি তৈরির জন্য খুবই উপযোগী। জাতটি ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বপন করা চলে এবং দেরিতে বপন করলেও দানার আকার প্রায় স্বাভাবিক থাকে।


৪. বারি গম-২৩ (বিজয়)
গম গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট 'বারি গম-২৩' (বিজয়) নামের একটি উচ্চ ফলনশীল গমের জাত আবিষ্কার করে। বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে ও মাঠ পর্যায়ে ফলন পরীক্ষায় জাতটি ভাল বলে প্রমাণিত হয়। এ জাতটি ২০০৫ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক 'বারি গম-২৩' (বিজয়) নামে অনুমোদন লাভ করে।
বৈশিষ্ট্য
১. চার পাঁচটি কুশি বিশিষ্ট গাছের উচ্চতা প্রায় ৩ থেকে ৩.৫ ফুট।
২. পাতা চওড়া ও হালকা সবুজ।
৩. শীষ বের হতে ৬০ থেকে ৬৫ দিন সময় লাগে।
৪. বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৩ থেকে ১১২ দিন সময় লাগে।
৫. শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০টি।
৬. দানার রং সাদা, চকচকে এবং আকারে বড়।
৭. জাতটি "পাতার দাগ রোগ" সহনশীল এবং "মরিচা রোগ" প্রতিরোধী।
৮. উপযুক্ত পরিবেশে একর প্রতি ফলন ১৭৫০ থেকে ২০০০ কেজি।
৯. জাতটি অধিক তাপ সহ্য করতে পারে। আমন ধান কাটার পর ডিসেম্বর মাসের ১৫তারিখ পর্যন্ত এ জাতটি বপন উপযোগী।

৫. বারি গম-২৪ (প্রদীপ)
গম গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট 'বারি গম-২৪' (প্রদীপ) নামের একটি উচ্চ ফলনশীল গমের জাত আবিষ্কার করে। এ জাতটি ২০০৫ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক 'বারি গম-২৪' (প্রদীপ) নামে অনুমোদন লাভ করে। বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে ও মাঠ পর্যায়ে ফলন পরীক্ষায় জাতটি ভাল বলে প্রমাণিত হয়।
বৈশিষ্ট্য
১. চার পাঁচটি কুশি বিশিষ্ট গাছের উচ্চতা প্রায় ৩ থেকে ৩.২৮ ফুট।
২. পাতা চওড়া ও গাঢ় সবুজ।
৩. শীষ বের হতে ৬৪ থেকে ৬৬ দিন সময় লাগে।
৪. বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০২ থেকে ১১০ দিন সময় লাগে।
৫. শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫৫টি।
৬. দানার রং সাদা, চকচকে এবং আকারে বড়।
৭. জাতটি "পাতার দাগ রোগ" সহনশীল এবং "মরিচা রোগ" প্রতিরোধী।
৮. জাতটি উপযুক্ত পরিবেশে একর প্রতি ফলন ১৪০০ থেকে ২০৫০ কেজি এবং দেরিতে বপনে জাতটি কাঞ্চনের চেয়ে শতকরা ১০ থেকে ২৫ ভাগ ফলন বেশি দেয়।
৯. অধিক তাপ সহ্য করতে পারে।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: আমন ধান কাটার পর দেরিতে বপনের জন্য এ জাতটি খুবই উপযোগী। এজাত থেকে উৎপন্ন আটায় শক্তিশালী গ্লুটেন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান থাকায় জাতটি পাউরুটি তৈরির জন্য খুবই উপযোগী। জাতটি ডিসেম্বর মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত বপন করা চলে এবং দেরিতে বপন করলেও দানার আকার প্রায় স্বাভাবিক থাকে।

পুষ্টিমাণ

(প্রতি ১০০ গ্রামে)


উপাদান

গম

চাউল

চাউলের সাথে তুলনা

খাদ্যবল (কিলোক্যালরী)

৩৬০

৩৬০

+১৪
কার্বোহাইড্রেট
(গ্রাম)
৬৯.৬০ ৭৯.২০
-৯.৬০
প্রোটিন (গ্রাম) ১২.০০ ৬.৪০
+৫.৬০
চর্বি (গ্রাম) ১.৭২ ০.৪০
+১.৩২
ফাইবার বা আঁশ (গ্রাম) ১.৯২ ০.২০
+১.৭২
খনিজ পদার্থ (গ্রাম) ২৭.২০ ০.৭২
+২৬.৪৮
ক্যালসিয়াম (মিলিগ্রাম) ৪৮.০০ ৯.২০
+৩৮.৮০
ফসফরাস (মিলিগ্রাম) ৪২৬.০০ ১৫৪.০০
+২৭২.০০
আয়রন (মিলিগ্রাম) ৩.২০ ৩.২০
সমান
ভিটামিন-এ (মাইক্রোগ্রাম) ২৯.২০
+২৯.২০
থায়ামিন (মিলিগ্রাম) ০.৪৯ ০.২০
+০.২৯
রিবোফ্লোভিন (মিলিগ্রাম) ০.২৯ ০.২০
+০.০৯

নিয়াসিন (মিলিগ্রাম)

৪.৪০

৪.০০

+০.৪০

সুতরাং উপরোক্ত বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, চাষ-সুবিধা, পরিবেশ রক্ষা
ও পুষ্টিমাণ প্রভৃতি বিবেচনায় গম চাষ বোরো ধান চাষ অপেক্ষা অধিক লাভজনক।

 

গম গম Reviewed by রেজওয়ান on 3:33 AM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.