বহেড়া

বৃহদাকার পাতাঝরা বৃক্ষ বিভীতকীর। উচ্চতা ১৫-২৫ ফুট। বিভীতকী বহেড়া নামে বেশি পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia belerica.
কথিত আছে, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের দেবরাজ ইন্দ্র অমৃতের সন্ধানে যখন সমুদ্র মন্থন করছিলেন, সে সময় এক ফোঁটা অমৃত মর্ত্যে পড়ে এই বহেড়াগাছের জন্ম।
এই গাছের জন্মস্থান ভারতে। সংস্কৃতে ‘বিভীতকী’ শব্দের অর্থ, এমন জিনিস, যা সব রোগ থেকে দূরে রাখে। বাংলাদেশের বনাঞ্চল এবং গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এ গাছ দেখা যায়।
বাকল ধূসর ছাই রঙের। বাকলে লম্বা ফাটল থাকে। পাতা গাছের ডালের আগায়। আকৃতি কাঁঠালের পাতার মতো। বোঁটা লম্বা। পাতা লম্বায় প্রায় পাঁচ ইঞ্চি। ফুল হয় পাতার বোঁটার বাহুমূল থেকে। ফুল ডিম্বাকৃতি, প্রায় এক ইঞ্চির মতো লম্বা। রং সবুজাভ-হলুদ। ফোটে অক্টোবরের দিকে।
ফল প্রায় ডিম্বাকৃতি, কিন্তু ওপর প্রান্ত তীক্ষ। ব্যাস প্রায় এক ইঞ্চি। রং গাঢ় বাদামি। ফল পাকে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ফলের বাইরের আবরণ মসৃণ ও শক্ত। ভেতরে একটিমাত্র শক্ত বীজ থাকে।
বহেড়া ফল এই উপমহাদেশে প্রাচীনতম আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কথিত আছে, প্রতিদিন বহেড়া ভেজানো পানি এক কাপ পরিমাণ পান করলে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়। বহেড়া নিয়ে বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে ও এখনো হচ্ছে।
বহেড়ায় আছে ট্রাইটারপেনয়েডস, কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড, সিটোস্টেরল, ট্যানিন, গেলোইল গ্লুকোজ, পামিটিক এসিড ও লিপোলিক এসিড।
বহেড়া বিশেষভাবে পরিশোধিত করে এর ফল, বীজ এবং বাকল ব্যবহূত হয় মানুষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও চিকিৎসায়।
বহেড়া হূৎপিণ্ড এবং যকৃতের রোগের আক্রমণ কমায়। সর্দিকাশি, পাইলস, কৃমিনাশক, জ্বরনাশক, অনিদ্রা, হাঁপানি, কুষ্ঠ এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যবহূত হয়।
বহেড়ার কাঠ হরিদ্রাভ ও শক্ত। কাঠ পানিতে সহজে পচে না, নৌকা তৈরিতে ব্যবহার হয়। ফল থেকে লেখার কালি বানানো হয়। বীজ থেকে বিশেষভাবে অঙ্কুরোদ্গম করা হয়। বহু বছর বাঁচতে পারে বহেড়া গাছ।
বহেড়া বহেড়া Reviewed by রেজওয়ান on 11:55 AM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.