তুলসী

তুলসী একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী একটি ঘন শাখা প্রশাখা বিমিষ্ট ২/৩ ফুট উঁচু একটি চিরহরিৎ গুল্ম। এর মূল কান্ড কাষ্ঠল, পাতা ২-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা, শাখাপ্রশাখার অগ্রভাগ হতে ৫ টি পুষ্পদন্ড বের হয় ও প্রতিটি পুষ্পদন্ডের চারদিকে ছাতার আকৃতির মত ১০-২০ টি স্তরে ফুল থাকে। প্রতিটি স্তরে ৬টি করে ছোট ফুল ফোটে। এর পাতা, ফুল ও ফলের একটি ঝাঁঝাল গন্ধ আছে। বাংলাদেশ ভারতের প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। হিন্দুবাড়িতে বেশি দেখা যায়, পূজায় ব্যবহার হয়। ভারতে বাণিজ্যক ভাবে চাষ হয়। জুলাই আগষ্ট বা নভেম্বর ডিসেম্বর এতে মঞ্জরী দেখা দেয়।
বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum basilicum Linn পরিবার: Libiatae ইংরেজি নাম: Common basil
ঔষধিগুণ
শিশুদের সর্দি কাশির জন্য এটি একটি মহা ঔষধ হলেও যে কোন বয়সের মানুষই এ থেকে উপকার পেয়ে থাকে

তুলসী পাতার গুণাগুণ
শুধু পূজো-অর্চনাতেই লাগে না৷ তুলসী পাতার অনেক গুণ রযেছে৷ আয়ুর্বেদে তুলসীকে ভেষজের আখ্যা দেওয়া হয়৷ চলুন এই ভেষজের গুণগুলো জেনে নিই৷

* জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন৷ অথবা তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে৷
* কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান৷ এতে উপকার পাবেন৷
* পেট খারাপ হলে তুলসীর 10 টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে 3-4 বার খান৷ পায়খানা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে৷
* মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে 4-5 বার তুলসী পাতা চেবান৷
* ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান কমে যাবে৷
* শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান এতে জ্বালা কমবে৷ পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে৷ সেখানে কোন দাগ থাকবে না৷
* ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য এছাড়া ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোনো দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান৷
* বুদ্ধি এবং স্মরণ শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন 5-7 টা তুলসী পাতা চিবান৷
* প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস 250 গ্রাম দুধ এবং 150 গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন৷ উপকার পাবেন৷
* ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান৷  

ক্যান্সার শুনে আজ আর ভয় পাবেন না৷ সঠিক চিকিত্সা হলে আপনি এই রোগের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন৷ ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য গবেষকরা প্রতিনিয়তই গবেষণা করছেন৷ আজ পর্যন্ত মেডিক্যাল সায়েন্স ক্যান্সারের নানা ওষুধ আবিষ্কার করেছে৷ তবে আপনি কি জানেন ভেষজ ওষুধ তুলসী আর পুদিনা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে৷ কিছুদিন আগে গবেষকরা তাদের রিসার্চে এই তথ্যটাই আবিষ্কার করলেন৷

রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের 10 জন ছাত্র তুলসী আর পুদিনার চারাগাছ নিয়ে গবেষণা করেন৷ তাঁরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালান৷ প্রথমে তারা ইঁদুর গুলোকে দুটো ভাগে ভাগ করে একটা অংশের শরীরের ক্ষতের উপর রাসায়নিক প্রলেপ লাগান৷ আর একটা অংশের উপর তুলসী আর পুদিনার নির্যাস থেকে তৈরী প্রলেপ লাগান৷ এক মাস পরে দেখা যায় যে সব ইঁদুরের উপর তুলসী আর পুদিনার প্রলেপ লাগানো হয় নি তাদের শরীরে আরও অনেক গভীর ক্ষত তৈরী হয়৷
আর যাদের শরীরে তুলসী আর পুদিনার প্রলেপ লাগানো হয়েছিল 11 মাস বাদে তাদের শরীরে ঐ ক্ষত তৈরী হয়৷ এতেই প্রমাণিত হয় যে সব ইঁদুরের শরীরে তুলসী আর পুদিনার প্রলেপ লাগানো হয়েছিল তাদের ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেছে৷ ত্বকের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর পর ইঁদুরের ফুসফুস আর ইনটেনস্টাইন নিয়ে গবেষণা চালান তারা৷ সবেতেই ধরা পড়ে তুলসী আর পুদিনার ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে৷ ক্যান্সার নিরাময় করা যায় না এই ধারনায় একেবারেই ভ্রান্ত৷ আয়ুর্বেদও ক্যান্সার নিরাময়ে সহায়ক হয়েছে৷

তুলসী ফুল ছোট পার্পেল বা হালকা লালচে বঙের হয়, সিলিন্ডারাকৃতির স্পাইকে ফুল গুলো ঘন হয়ে জন্মে থাকে। ফল গুলো ও ছোট, বীজ হলুদ বা একটু লালচে ধরনের।
সাধারনত ভেজা মাটিতে তুলসী গাছ জন্মে থাকে । তুলসী শাখান্বিত, সুগন্ধ যুক্ত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। গাছটির সমস্ত শরীরে সুক্ষ রোম বিদ্যমান । পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ ৭৫-৯০ সে.মি. হয়। কান্ড শক্ত ও চতুষ্কোনাকার।

এর পাতা প্রায় গোলাকার প্রায় ৫ সে.মি. লম্বা হয়, কিনারা খাঁজ কাটা তবে প্রজাতিভেদে এর তারতম্য্ও হতে পারে। পাতায় এক ধরণের সুগন্ধী তেল বিদ্যমান বলেই তুলসী গাছ সুগন্ধযুক্ত।

তুলসী আমাদের উপমহাদেশ তথা সারা ভারতবর্ষে জন্মানো খুবই সাধারন একটি উদ্ভিদ। হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে তুলসী ব্যবহৃত হয় বলে বাড়ীতে, মন্দিরে তুলসী গাছ লাগিয়ে থাকে। দৈনন্দিন পুজা অর্চনার কাজে তুলসী পাতা ব্যবহৃত হয়। প্রায় প্রতিটি হিন্দু বাড়ীতে ঐতিহ্য হিসাবে তুলসী গাছ দেখা যায়। হিন্দু ধর্মমতে, তুলসী গাছ অতি পুজনীয়, বিশেষকরে সান্ধ্য পুজায় তুলসী অনিবার্য।



তুলসী গাছের গুনের কথা বলে শেষ করা কঠিন। সর্দিকাশি থেকে শুরু করে চর্মরোগ, পেটের পীড়াসহ নানা রোগেই গাছের রস ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ আমাদের পরিবেশে, বনে-ঝোপে প্রাকৃতিকভাবে খুব বেশী আর টিকে নেই। এই গাছের অস্তিত্ব এখন নিতান্ত স্বাস্থ্যসচেতন লোকের বাড়ীর টবে। গাছটি কৃমিনাশক, বায়ুনাশক, হজমকারক ও রুচিবর্ধক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়। অজীর্নজনিত পেটের ব্যথায় তুলসীপাতার রস বেশ উপকারী।
বাংলা নাম: তুলসী
অন্যান্য নাম: Holy basil, Tulsi तुलसी (Hindi, Tamil, Telugu), Trittavu (Malayalam), Tulshi (Marathi)
বৈজ্ঞানিক নাম: ( Ocimum sanctum )
গোত্র: Lamiaceae


তুলসী তুলসী Reviewed by রেজওয়ান on 3:01 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.