পরশপিপুল (Thespesia populnea Syn: Hibiscus populnea) মূলত উপকূলীয়
অঞ্চলের বৃক্ষ। সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। পৃথিবীর প্রায় সব উষ্ণ
অঞ্চলেই সহজলভ্য। ধারণা করা হয় যে এরা পৃথিবীর প্রাচীন বৃক্ষরাজির অন্যতম
প্রতিনিধি। সারা বিশ্বে Portia বৃক্ষ নামে বেশি পরিচিত। আমাদের দেশে ‘বলু’গাছ নামেও পরিচিত। প্রচলিত অন্যান্য
নামের মধ্যে Indian Tulip Tree, Pacific Rosewood, Seaside Mahoe ইত্যাদি
অন্যতম।
বাসি এবং সতেজ ফুলের রং ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় খুব সহজেই নজরকাড়ে। পাতার গড়ন,
ডালপালার বিন্যাস এবং অবারিত প্রস্ফুটন এ গাছকে আকর্ষণীয় বৃক্ষের মর্যাদা
দিয়েছে। তবে উপকূল থেকে দূরের গাছগুলোর ফুল ও পাতার গড়নে কিছুটা ভিন্নতা
লক্ষ করা যায়। ঢাকায় খুব একটা চোখে পড়ে না। জানামতে, রমনা উদ্যানের অরুণোদয়
ফটক পেরিয়ে সোজা এক শ গজ সামনে গেলে পাওয়া যাবে একটি গাছ। ধানমন্ডি ৩২
নম্বর লাগোয়া লেকের পাড়েও আছে একটি। সেগুনবাগিচায় (গণপূর্ত ভবনের পাশে)
স্থাপত্য অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে স্থপতি আলপনা চাকমার লাগানো নবীন গাছটিতেও ফুল
ফুটতে শুরু করেছে। কোটির অধিক মানুষের এই শহরে মাত্র এ কয়েকটি গাছ!
পরশপিপুল মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ, ৭ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে
পারে। পাতা তাম্বুলাকৃতির, ১২ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, বোঁটা পাঁচ
সেমি দীর্ঘ। অশ্বত্থ পাতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। তবে অশ্বত্থ পাতার মতো
লম্বা লেজ নেই। অশ্বত্থের আরেক নাম পিপুল। সম্ভবত পাতার সাদৃশ্যই এই
নামকরণ। ফুল একক বা সজোড়, পাঁচ থেকে সাত সেমি চওড়া, হালকা হলুদ। ভেতরে গাঢ়
লাল দাগ। অনেকগুলো পরাগকেশর যুক্ত জবা ফুলের মতো, বাসি ফুল লালচে।
প্রস্ফুটনকাল গ্রীষ্ম-বর্ষা হলেও প্রায় সারা বছরই দু-একটি ফুল দেখা যায়। ফল
গোলাকার, তিন সেমি চওড়া, পাঁচ খণ্ড ও শক্ত। আপনাআপনিই ফেটে যায়। সাধারণত
বীজ থেকেই বংশবৃদ্ধি।
এ গাছের কাঠ দৃঢ় ও স্থায়ী। সাধারণত নৌকা, বন্দুকের বাঁট, গরুর গাড়ি ও চাষের
যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহার্য। বাকল থেকে আঁশ এবং ফুল থেকে হলুদ রং পাওয়া
যায়। তা ছাড়া শিকড় টনিক, বাকল অরেচক, আমাশয় ও চর্মরোগের ওষুধ। বীজের তেল
একসময় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হতো।
মোকারম হোসেন | প্রথম আলো
পরশ পিপুল
Reviewed by রেজওয়ান
on
8:27 AM
Rating:
খুব ভালো|
ReplyDelete